Friday, February 18, 2011

বান্দার দুঃখ-কষ্ট



‏عَنْ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى ‏ ‏إِنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُمْ بِهِ اللَّهُ ‏ ‏وَعَنْ قَوْلِهِ ‏ ‏مَنْ يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ ‏ ‏فَقَالَتْ مَا سَأَلَنِي عَنْهَا أَحَدٌ مُنْذُ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏فَقَالَ ‏ ‏هَذِهِ مُعَاتَبَةُ اللَّهِ الْعَبْدَ فِيمَا يُصِيبُهُ مِنْ الْحُمَّى وَالنَّكْبَةِ حَتَّى الْبِضَاعَةُ يَضَعُهَا فِي كُمِّ قَمِيصِهِ فَيَفْقِدُهَا فَيَفْزَعُ لَهَا حَتَّى إِنَّ الْعَبْدَ لَيَخْرُجُ مِنْ ذُنُوبِهِ كَمَا يَخْرُجُ ‏ ‏التِّبْرُ ‏ ‏الْأَحْمَرُ مِنْ ‏ ‏الْكِيرِ ‏ سنن الترميذي / ‏ ‏كِتَاب ‏ ‏النِّكَاحِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏‏ ‏بَاب ‏ ‏مَا جَاءَ فِي إِكْرَاهِ الْيَتِيمَةِ عَلَى التَّزْوِيجِ ‏

উমাইয়া হযরত আয়েশাকে জিজ্ঞেস করেন এই আয়াত সম্পর্কে—“ যদি তোমরা প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে আছে (অন্যায় বিষয়/খারাপ চিন্তা) অথবা গোপন রাখ তাকে, আল্লাহ সে সম্পর্কে হিসেব নিবেন।” এবং এই আয়াত সম্পর্কে “ যে অন্যায় কাজ করবে সে তার শাস্তি ভোগ করবে।”

তখন হযরত আয়েশা র. বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করবার পর এ পর্যন্ত কেউ আমাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেনি। নবি স. বলেছেন, এই দুই আয়াতে যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা হচ্ছে (দুনিয়াতে) বান্দার প্রতি যে জ্বর ও দুঃখ প্রভৃতি পৌছে, তা দিয়ে আল্লাহ যে শাস্তি দেন তা—এমনকি বান্দা তার জামার জেবে যে জিনিষ রাখে, অতঃপর তা হারিয়ে ফেলে এবং তজ্জন্য অস্থির হয়ে যায় (এটিও তাঁর শাস্তির অন্তর্গত।)—অবশেষে বান্দা তার গুনাহ থেকে (সাফ হয়ে) বের হয়, যেভাবে স্বর্ণ হাপরের আগুনে সাফ হয়ে বের হয়।

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: তাবেয়ি আলি ইবনে যায়েদ , তাবেয়ী উমাইয়া থেকে বর্ণনা করেন। [তিরমিযী কিতাবুন্নিকাহ] [মিশকাত ১৪৭১ অধ্যায়: রুগ্নকে দেখতে যাওয়া ও রোগের সাওয়াব]

উৎকৃষ্ট রিযিক



وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ

আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকেযা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি ৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিক-  উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী   
____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [২০:১৩১] / সূরা-ত্বহা: আয়াত ১৩১


ব্যাখ্যা:

"রিয্ক" শব্দের অনুবাদ আমি করেছি "হালাল রিযিক"৷ এর কারণ মহান আল্লাহ কোথাও হারাম সম্পদকে "রবের রিযিক" হিসেবে পেশ করেননি ৷ এর অর্থ হচ্ছে ফাসেক ও দুশ্চরিত্র লোকেরা অবৈধ পথে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করে নিজেদের জীবনে যে বাহ্যিক চমক সৃষ্টি করে নেয় তোমার ও তোমার মু'মিন সাথীদের তাকে ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয় ৷ এ ধন-দওলত ও শান শওকত তোমাদের জন্য মোটেও ঈর্ষানীয় নয় ৷ তোমারা নিজেরা পরিশ্রম করে যে পাক-পবিত্র রিযিক উপার্জন করো তা যতই সামান্য হোক না কেন সত্যনিষ্ঠ ও ঈমানদার লোকদের জন্য তাই ভালো এবং তার মধ্যে এমন কল্যাণ রয়েছে যা দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত বজায় থাকবে 

Wednesday, February 16, 2011

হযরত বেলাল র.



হযরত বেলাল র.

‏أَنَّ النَّبِيَّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏قَالَ ‏ ‏لِبِلَالٍ ‏ ‏عِنْدَ صَلَاةِ الْفَجْرِ يَا ‏ ‏بِلَالُ ‏ ‏حَدِّثْنِي ‏ ‏بِأَرْجَى ‏ ‏عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الْإِسْلَامِ فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الْجَنَّةِ قَالَ مَا عَمِلْتُ عَمَلًا ‏ ‏أَرْجَى ‏ ‏عِنْدِي أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طَهُورًا فِي سَاعَةِ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلَّا صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ ‏صحيح بخاري / ‏كِتَاب ‏ ‏الْجُمُعَةِ ‏‏ ‏بَاب ‏ ‏فَضْلِ الطُّهُورِ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ‏ ‏وَفَضْلِ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْوُضُوءِ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ‏

একবার রাসূল স. ফজরের নামাযের সময় বেলালকে বললেনঃ বেলাল! বল দেখি, মুসলমান হয়ে তুমি এমন কোন কাজ করেছ যার সাওয়াবের আশা তুমি বেশি করতে পার? কারণ, আমি তোমার জুতোর শব্দ বেহেশতে আমার সামনে শুনতে পেয়েছি! তখন বেলাল বললেনঃ আমি এছাড়া এমন কোন কাজ করিনি যা আমার কাছে বেশি সাওয়াবের কারণ হতে পারে। আমি রাতে বা দিনের যে কোন সময়েই ওযু করেছি তখন-ই সে ওযু দিয়ে আমি নামায পড়েছি, যা (আল্লাহ’র পক্ষ থেকে ) আমাকে তৌফিক দেয়া হয়েছে। (অর্থাৎ আমি সব সময় ওযুর পর দু রাকাত ‘ তাহিয়্যাতুল ওযু’র নামায পড়তে চেষ্টা করেছি)।

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: [মুসলিম] [বুখারী,কিতাবুল জুমুআহ] [ মিশকাত: ১২৪৬, অধ্যায় নফল নামায]

সান্ধ্যআভা ও শয়তানের ছড়িয়ে পড়া


সান্ধ্যআভা ও শয়তানের ছড়িয়ে পড়া

‏قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏إِذَا كَانَ جُنْحُ اللَّيْلِ أَوْ أَمْسَيْتُمْ فَكُفُّوا صِبْيَانَكُمْ فَإِنَّ الشَّيَاطِينَ تَنْتَشِرُ حِينَئِذٍ فَإِذَا ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنْ اللَّيْلِ فَحُلُّوهُمْ فَأَغْلِقُوا الْأَبْوَابَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا ‏ ‏وَأَوْكُوا ‏ ‏قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ وَخَمِّرُوا آنِيَتَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ وَلَوْ أَنْ تَعْرُضُوا عَلَيْهَا شَيْئًا وَأَطْفِئُوا مَصَابِيحَكُمْ ‏ صحيح بخاري / ‏كِتَاب ‏ ‏الْأَشْرِبَةِ ‏‏ ‏بَاب ‏ ‏تَغْطِيَةِ الْإِنَاءِ ‏‏قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏إِذَا كَانَ جُنْحُ اللَّيْلِ ‏ ‏أَوْ أَمْسَيْتُمْ فَكُفُّوا ‏ ‏صِبْيَانَكُمْ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْتَشِرُ حِينَئِذٍ فَإِذَا ذَهَبَ سَاعَةٌ مِنْ اللَّيْلِ فَخَلُّوهُمْ وَأَغْلِقُوا الْأَبْوَابَ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَفْتَحُ بَابًا مُغْلَقًا ‏ ‏وَأَوْكُوا ‏ ‏قِرَبَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ ‏ ‏وَخَمِّرُوا ‏ ‏آنِيَتَكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ وَلَوْ أَنْ تَعْرُضُوا عَلَيْهَا شَيْئًا وَأَطْفِئُوا مَصَابِيحَكُمْ ‏ صحيح مسلم / ‏كِتَاب ‏ ‏الْأَشْرِبَةِ ‏
রাসূল স. বলেছেন, যখন রাতের অন্ধকার নেমে আসে অথবা বলেছেন, সন্ধ্যা হয়, তখন তোমাদের শিশুদের ঘরে রাখ। কেননা, সেই সময় শয়তান ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতের কিছু সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তাদের ছেড়ে দাও এবং বিসমিল্লাহ বলে ঘরের দরজাগুলো বন্ধ কর। কারণ, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর বিসমিল্লাহ বলে  তোমাদের মশকগুলোর (পানি রাখার পাত্র) মুখ বন্ধ কর এবং বিসমিল্লাহ বলে তোমাদের পাত্রগুলোও ঢেকে রাখ। (ঢাকবার কিছু না পেলে) কোন কিছু আড়াআড়িভাবে হলেও পাত্রের উপর রেখে দাও।-(বুখারী ও মুসলিম) বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি স. বলেছেনঃ পাত্রগুলো ঢেকে রাখ। মশকগুলোর মুখ বেঁধে রাখ। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রাখ এবং সন্ধ্যায় তোমাদের শিশুদের ঘরের ভেতর আবদ্ধ রাখ। কেননা এ সময় জ্বিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং ছিনিয়েও নেয়। আর তোমরা শোবার সময় বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলবে। কেননা, দুষ্ট ইঁদুরগুলো কখনও কখনও (প্রজ্বলিত) সলতা টেনে নিয়ে যায়। ফলে ঘরের লোকজনদের পুড়িয়ে দেয়। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, নবি স. বলেছেন, তোমরা পাত্রগুলোকে ঢেকে রাখবে মশকের মুখ বেঁধে রাখবে। ঘরের দরজাগুলো(সন্ধ্যায়) বন্ধ রাখবে, (শোবার সময়) বাতি নিভিয়ে দিবে। কেননা শয়তান (বন্ধ) মশক খুলতে পারে না, (বন্ধ) দরজা খুলতে পারে না এবং (ঢাকা) পাত্র উন্মুক্ত করতে পারে না। আর যদি তোমাদের কেউ একটি কাঠি ছাড়া আর কিছুই না পায়, তবে বিসমিল্লাহ বলে তা-ই যেন আড়াআড়িভাবে পাত্রের উপর রেখে দেয়। কেননা, দুষ্টু ইঁদুর ঘর পুড়িয়ে ফেলতে পারে।

মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, সূর্যাস্তের পর রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত তোমাদের জানোয়ার ও শিশুদের(বাইরে) ছেড়ে দিবে না। কেননা, সূর্যাস্তের পর সান্ধ্যআভা বিলীন হওয়া পর্যন্ত শয়তান ছড়িয়ে পড়ে।

মুসলিমের আরেক বর্ণনায় আছে, নবি স. বলেছেনঃ খাদ্য পাত্র ঢেকে রাখ এবং মশক বন্ধ রাখ। কেননা, বছরের এমন একটি রাত আছে, যে রাতে বিভিন্ন রকমের বালা মুসিবত নেমে আসে। উক্ত বালার গতিবিধি এমন সব পাত্রের দিকে হয় যা ঢাকা নয় এবং এমন পান-পাত্রে প্রবেশ করে যার মুখ বন্ধ নয়।

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: বুখারী ও মুসলিম, কিতাবুল আশরিবাহ [মিশকাত ৪১০৯, অধ্যয়: বাসন কেষণ ইত্যাদি ঢেকে] রাখা

দয়াময় রাহমানের বান্দা


যারা দয়াময় রাহমানের বান্দা

وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا 

রহমানের (আসল) বান্দা তারাই  যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে (অশালীন ভাষায় ) কথা বলতে থাকলে বলে দেয়তোমাদের সালাম

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [২৫:৬৩] / সূরা- আল ফুরকান : আয়াত ৬৩

ব্যাখ্যা:

                       রহমানের (আসল) বান্দা তারাই  যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে

অর্থাৎ অহংকারের সাথে বুক ফুলিয়ে চলে না ৷ গর্বিত স্বৈরাচারী ও বিপর্যয়কারীর মতো নিজের চলার মাধ্যমে নিজের শক্তি প্রকাশ করার চেষ্টা করে না ৷ বরং তাদের চালচলন হয় একজন ভদ্র মার্জিত ও সৎস্বভাব সম্পন্ন ব্যক্তির মতো ৷ নম্রভাবে চলার মানে দুর্বল ও রুগীর মতো চলা নয় এবং একজন প্রদর্শন অভিলাষী নিজের বিনয় প্রদর্শন করার বা নিজের আল্লাহ ভীতি দেখাবার জন্য যে ধরনের কৃত্রিম চলার ভংগী সৃষ্টি করে সে ধরনের কোন চলাও নয় ৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে চলার সময় এমন শক্তভাবে পা ফেলতেন যেন মনে হতো উপর থেকে ঢালুর দিকে নেমে যাচ্ছেন ৷ উমরের ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে তিনি এক যুবককে দুর্বলভাবে হেঁটে যেতে দেখে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন তুমি কি অসুস্থ সে বলে না ৷ তিনি ছড়ি উঠিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলেন শক্ত হয়ে সবল ব্যক্তির মতো চলো ৷ এ থেকে জানা যায় নম্রভাবে চলা মানে একজন ভালো মানুষের স্বাভাবিকভাবে চলা ৷ কৃত্রিম বিনয়ের সাহায্যে যে চলার ভংগী সৃষ্টি করা হয় অথবা যে চলার মধ্য দিয়ে বানোয়াট দীনতা ও দুর্বলতার প্রকাশ ঘটানো হয় তাকে নম্রভাবে চলা বলে না ৷
কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে মানুষের চলার মধ্যে এমন কি গুরুত্ব আছে যে কারণে আল্লাহর সৎ বান্দাদের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ প্রসংগে সর্বপ্রথম এর কথা বলা হয়েছে এ প্রশ্নটিকে যদি একটু গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বুঝা যায় যে মানুষের চলা শুধুমাত্র তার হাঁটার একটি ভংগীর নাম নয় বরং আসলে এটি হয় তার মন-মানস চরিত্র ও নৈতিক কার্যাবলীর প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ৷ একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির চলা ,একজন গুণ্ডা ও বদমায়েশের চলা একজন স্বৈরাচারী ও জালেমের চলা একজন আত্মম্ভরী অহংকারীর চলা একজন সভ্য-ভব্য ব্যক্তির চলা একজন দরিদ্র-দীনহীনের চলা এবং এভাবে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের লোকদের চলা পরস্পর থেকে এত বেশী বিভিন্ন হয় যেতাদের প্রত্যেককে দেখে কোন ধরনের চলার পেছনে কোন ধরনের ব্যক্তিত্ব কাজ করছে তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে ৷ কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে ,রহমানের বান্দাদের তোমরা সাধারণ লোকদের মধ্যে চলাফেরা করতে দেখেই তারা কোন ধরনের লোক পূর্ব পরিচিত ছাড়াই আলাদাভাবে তা চিহ্নিত করতে পারবে৷ এ বন্দেগী তাদের মানসিকতা ও চরিত্র যেভাবে তৈরী করে দিয়েছে তার প্রভাব তাদের চালচলনেও সুস্পষ্ট হয় ৷ এক ব্যক্তি তাদের দেখে প্রথম দৃষ্টিতে জানতে পারে তারা ভদ্র ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হৃদয়বৃত্তির অধিকারী তাদের দিক থেকে কোন প্রকার অনিষ্টের আশংকা করা যেতে পারে না ৷

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে


যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে

‏عَنْ النَّبِيِّ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‏ ‏قَالَ ‏ ‏مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‏ صحيح بخاري / كِتَاب ‏ ‏الْأَدَبِ ‏

যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানদের সম্মান করে। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন প্রতিবেশিকে কষ্ট না দেয়।আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। অপর এক বর্ণনায় ‘ প্রতিবেশীর’ জায়গায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই আত্মীয়ের হক আদায় করে।

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত।  [বুখারী: কিতাবুল আদাব], মুসলিম , [মিশকাত: ৪০৫৯, অধ্যায়: অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গ ]

সুস্পষ্ট ক্ষতি


সুস্পষ্ট ক্ষতি

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَىٰ حَرْفٍ ۖ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ ۖ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ

আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছেদ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও ৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি  

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [২২:১১] / সূরা- আল হাজ্ব: আয়াত ১১

 ব্যাখ্যা: 
                 আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছেদ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে

অর্থাৎ দীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে৷ যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে ৷ যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে৷

                  যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় 

এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্কআকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে ৷ তারা ইসলাম গ্রহণ করে লাভের শর্তে ৷ তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যেতাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবেসব ধরণের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবেআল্লাহর দীন তাদের কাছে কোন স্বার্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না ৷ এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দীন তাদের কাছে খুবই ভালো ৷ কিন্তু যখনই কোন আপদ বলাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদকষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতারসূলের রিসালাত ও দীনের সত্যতা কোনটাই ওপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না ৷ এরপর তারা এমন প্রতিটি বেদীমূলে মাথা নোয়াতে উদ্যেগী হয় যেখানে তাদের লাভের আশা ও লোকসান থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে 

                 “ তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও ৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি 

এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে ৷ আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয় ৷ কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের অনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয় ৷ আর মু'মিন যখন পূর্ণ ধৈর্যঅবিচলতা,দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকেতবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকেআখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয় ৷ কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভবনা থাকে না ৷ তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠ আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছেদুনিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে৷ ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না  আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধিনিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যেআখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতিলাভের সম্ভাবনা থাকে না ৷ এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায় 

শয়তান যে খাবার নিজের জন্য হালাল করে নেয়



শয়তান যে খাবার নিজের জন্য হালাল করে নেয়

ان الشيطن يستحل الطعام ان لايذكراسم الله عليه

শয়তান সেই খাবারকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যদি না তাতে বিসমিল্লাহ বলা হয়।

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: হযরত হুযায়ফা থেকে বর্ণিত  মুসলিম , মিশকাত-৩৯৮১, অধ্যায়- খাদ্য পর্ব

দুনিয়ার জীবন


দুনিয়ার জীবন যাদের প্রতারণার জালে আবদ্ধ করে রেখেছে

يٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَالۡاِنۡسِ اَلَمۡ يَاۡتِكُمۡ رُسُلٌ مِّنۡكُمۡ يَقُصُّوۡنَ عَلَيۡكُمۡ اٰيٰتِىۡ وَيُنۡذِرُوۡنَكُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هٰذَا‌ؕ قَالُوۡا شَهِدۡنَا عَلٰٓى اَنۡفُسِنَا‌ وَغَرَّتۡهُمُ الۡحَيٰوةُ الدُّنۡيَا وَشَهِدُوۡا عَلٰٓى اَنۡفُسِهِمۡ اَنَّهُمۡ كَانُوۡا كٰفِرِيۡنَ

 কিয়ামতের দিন আল্লাহ জ্বীন ও মানব সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করবেন) হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে কি রসূলেরা আসেনিযারা তোমাদেরকে আমার আয়াত শোনাতো এবং এ দিনটির পরিণাম সম্পর্কে তোমাদেরকে সর্তক করতো ? তারা বলবে হাঁআমরা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দিচ্ছি ৷আজ দুনিয়ায় জীবন এদেরকে প্রতারণা জালে আবদ্ধ করে রেখেছে কিন্তু সেদিন এরা কাফের ছিল বলে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ দেবে৷

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [৬:১৩০] / সূরা-আল আনআম: আয়াত ১৩০

পরীক্ষা



পরীক্ষা

‏قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً قَالَ ‏ ‏الْأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الْأَمْثَلُ فَالْأَمْثَلُ ‏ ‏فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ فَمَا ‏ ‏يَبْرَحُ ‏ ‏الْبَلَاءُ بِالْعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الْأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ ‏ سنن الترميذي / ‏ ‏كِتَاب ‏ ‏الصَّيْدِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ‏ ‏صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ َسَلَّمَ ‏‏ ‏بَاب ‏ ‏مَا جَاءَ فِي ‏ ‏الذَّكَاةِ ‏ ‏بِالْقَصَبِ وَغَيْرِهِ
একবার রাসূল স. কে জিজ্ঞেস করা হল “ বিপদ দিয়ে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা করা হয় কাদের?”
নবী স. বললেন “ নবীদের, অতঃপর তাঁদের তুলনায় যারা উত্তম তাঁদের। মানুষ তাঁর ধার্মিকতার অনুপাতে বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে তাঁর দ্বীনের (ইসলামের) ব্যাপারে শক্ত হয়, তাঁর বিপদও শক্ত হয়।  যদি তাঁর দ্বীনের ব্যাপারে শিথিলতা থাকে, তবে বিপদও সহজ হয়। এভাবে তাঁর  বিপদ হতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সে পৃথিবীতে চলাফেরা করে, অথচ তাঁর কোন গোনাহ থাকে না। 

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত । তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, [ মিশকাত: ১৪৭৬, অধ্যায় রুগিকে দেখতে যাওয়া ও রোগের সাওয়াব]

দৃষ্টিহীন অনুশোচনা



দৃষ্টিহীন অনুশোচনা

 وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا قَالَ كَذَٰلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيتَهَا ۖ وَكَذَٰلِكَ الْيَوْمَ تُنسَىٰ

এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেতার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উঠালেনআমি তো চক্ষুমান ছিলাম। আল্লাহ বলবেনঃ এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল,অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে।
__________________________________________________
তথ্য সূত্র: আল কোরআন। সূরা-তোহা। আয়াত ১২৪-১২৬

আল্লাহ'র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারি



আত্মীয়তা রক্ষা ও আল্লাহ'র পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারি

‏أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ ‏ ‏لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا ‏ ‏تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ ‏ ‏وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنْ اللَّهِ ‏ ‏ظَهِيرٌ ‏ ‏عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ ‏ صحيح مسلم / ‏كِتَاب ‏ ‏الْبِرِّ وَالصِّلَةِ وَالْآدَابِ ‏‏ ‏بَاب ‏ ‏صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيمِ قَطِيعَتِهَا ‏

একবার এক লোক বলল “ হে আল্লাহর রাসূলআমার এমন অনেক আত্মীয় স্বজন আছে আমি তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করিকিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করিঅথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে আমি তাদের ব্যবহারে ধৈর্য ধরিকিন্তু তারা আমার সাথে মূর্খতা প্রদর্শন করে
জবাবে রাসূল সবললেন “তুমি যেমন বললেযদি তুমি সেরকম-ই আচরণ করে থাকতবে যেন তুমি তাদের মুখের উপর  গরম ছাই ছুঁড়ে মারছ আর তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত এই নীতির উপর থাকবেততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তোমার সাথে একজন  সাহায্যকারি থাকবেন যিনি তাদের ক্ষতি প্রতিরোধ করবেন
________________________________________________
আবু হুরাই থেকে [মুসলিম-কিতাবআত্মীয় স্বজনদের সাথে ভাল ব্যবহার ও আদাব [মিশকাত-৪৭০৫অধ্যায়সৎকাজ ও সদ্ব্যবহার

আলেম সমাজের নীরবতা


সমাজের পাপাচারে আলেম সমাজের নীরবতা অনুচিৎ

لَوْلَا يَنْهَاهُمُ الرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ عَن قَوْلِهِمُ الْإِثْمَ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَصْنَعُونَ

দরবেশ ও আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম খেতে নিষেধ করে না? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।
____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [৫:৬৩] / সূরা-মায়েদা: আয়াত-৬৩

ব্যাখ্যাইহুদি আলেমদের বৃহত্তম অপরাধ এই ছিল যেতারা আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান সর্বসাধারণ্যে প্রচার করার পরির্বতে তাকে রাব্বী ও একটি সীমিত ধর্মীয় পেশাদার গোষ্ঠীর মধ্যেআবদ্ধ রেখেছিল ৷ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ জনমানুষ তো দূরের কথা ইহুদি জনতাকেও এই জ্ঞানের স্পর্শ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল ৷ সাধারণ অজ্ঞতার কারণে জনগণ যখন ব্যাপকভাবে ভ্রষ্টতার শিকার হলো তখন ইহুদি আলেমসমাজ জনগণের চিন্তাও কর্মের সংস্কার সাধনে ব্রতী হয়নি ৷ বরং উল্টো জনগণের মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তা অব্যাহত রাখার জন্য যে ভ্রষ্টতা ও শরীয়াত বিরোধী কর্ম জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তো তাকে তারা নিজেদের কথা ও কাজের সাহায্যে অথবা নীরব সমর্থনের মাধ্যমে বৈধতার ছাড়পত্র দান করতো ৷ এই ধরনের প্রবণতা ও কর্মনীতি অবলম্বন না করার জন্য মুসলমানদেরকে তাকীদ করা হচ্ছে ৷ সমগ্র বিশ্ববাসীকে হিদায়াত করার গুরুদায়িত্ব যে উম্মাতের ওপর সোপর্দ করা হয়েছে সেই হিদায়াতকে কৃপণের ধনের মতো আগলে না রেখে বেশী করে সম্প্রসারিত করাই হচ্ছে তার কর্তব্য 


বান্দাহ’র ডাকে সাড়া



আল্লাহ তাঁর বান্দাহ’র ডাকে সাড়া দেন

وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ

তোমাদের রব তোমাদের বলেন “ তোমরা আমাকে ডাকো! আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো!  যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকেঅচিরেই তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [৪০:৬০] / সূরা-আল মুমিন: আয়াত-৬০