Saturday, May 28, 2011

যারা দয়াময় রাহমানের বান্দা

وَعِبَادُ الرَّحْمَٰنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
রহমানের (আসল) বান্দা তারাই  যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে (অশালীন ভাষায় ) কথা বলতে থাকলে বলে দেয়,  তোমাদের সালাম

____________________________________________________________________
তথ্য সূত্র: কোরআন [২৫:৬৩] / সূরা- আল ফুরকান : আয়াত ৬৩

ব্যাখ্যা:
                       রহমানের (আসল) বান্দা তারাই  যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে
অর্থাৎ অহংকারের সাথে বুক ফুলিয়ে চলে না ৷ গর্বিত স্বৈরাচারী ও বিপর্যয়কারীর মতো নিজের চলার মাধ্যমে নিজের শক্তি প্রকাশ করার চেষ্টা করে না ৷ বরং তাদের চালচলন হয় একজন ভদ্র , মার্জিত ও সৎস্বভাব সম্পন্ন ব্যক্তির মতো ৷ নম্রভাবে চলার মানে দুর্বল ও রুগীর মতো চলা নয় এবং একজন প্রদর্শন অভিলাষী নিজের বিনয় প্রদর্শন করার বা নিজের আল্লাহ ভীতি দেখাবার জন্য যে ধরনের কৃত্রিম চলার ভংগী সৃষ্টি করে সে ধরনের কোন চলাও নয় ৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে চলার সময় এমন শক্তভাবে পা ফেলতেন যেন মনে হতো উপর থেকে ঢালুর দিকে নেমে যাচ্ছেন ৷ উমরের ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে , তিনি এক যুবককে দুর্বলভাবে হেঁটে যেতে দেখে তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করেন , তুমি কি অসুস্থ ? সে বলে , না ৷ তিনি ছড়ি উঠিয়ে তাকে ধমক দিয়ে বলেন , শক্ত হয়ে সবল ব্যক্তির মতো চলো ৷ এ থেকে জানা যায় , নম্রভাবে চলা মানে , একজন ভালো মানুষের স্বাভাবিকভাবে চলা ৷ কৃত্রিম বিনয়ের সাহায্যে যে চলার ভংগী সৃষ্টি করা হয় অথবা যে চলার মধ্য দিয়ে বানোয়াট দীনতা ও দুর্বলতার প্রকাশ ঘটানো হয় তাকে নম্রভাবে চলা বলে না ৷
কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে , মানুষের চলার মধ্যে এমন কি গুরুত্ব আছে যে কারণে আল্লাহর সৎ বান্দাদের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ প্রসংগে সর্বপ্রথম এর কথা বলা হয়েছে ? এ প্রশ্নটিকে যদি একটু গভীর দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বুঝা যায় যে , মানুষের চলা শুধুমাত্র তার হাঁটার একটি ভংগীর নাম নয় বরং আসলে এটি হয় তার মন-মানস , চরিত্র ও নৈতিক কার্যাবলীর প্রত্যক্ষ প্রতিফলন ৷ একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির চলা , একজন গুণ্ডা ও বদমায়েশের চলা , একজন স্বৈরাচারী ও জালেমের চলা , একজন আত্মম্ভরী অহংকারীর চলা , একজন সভ্য-ভব্য ব্যক্তির চলা , একজন দরিদ্র-দীনহীনের চলা এবং এভাবে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের লোকদের চলা পরস্পর থেকে এত বেশী বিভিন্ন হয় যে, তাদের প্রত্যেককে দেখে কোন ধরনের চলার পেছনে কোন ধরনের ব্যক্তিত্ব কাজ করছে তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে ৷ কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে , রহমানের বান্দাদের তোমরা সাধারণ লোকদের মধ্যে চলাফেরা করতে দেখেই তারা কোন ধরনের লোক পূর্ব পরিচিত ছাড়াই আলাদাভাবে তা চিহ্নিত করতে পারবে৷ এ বন্দেগী তাদের মানসিকতা ও চরিত্র যেভাবে তৈরী করে দিয়েছে তার প্রভাব তাদের চালচলনেও সুস্পষ্ট হয় ৷ এক ব্যক্তি তাদের দেখে প্রথম দৃষ্টিতে জানতে পারে , তারা ভদ্র , ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল হৃদয়বৃত্তির অধিকারী , তাদের দিক থেকে কোন প্রকার অনিষ্টের আশংকা করা যেতে পারে না ৷


No comments:

Post a Comment